নকশি কাঁথার কাজ: শত বছরের পুরনো লোকশিল্প
জেসমিন একজন বিজনেস কনসালটেন্ট। তিনি একবার একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন।
উঠেছিলেন একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে অংশগ্রহণকারী এসেছিলেন।
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষ করে ক্লান্ত জেসমিন হোটেল রুমে ফিরলেন।
তিনি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলেন, তার বিছানায় নকশি কাঁথা ভাঁজ করে রাখা। সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় তিনি নকশি কাঁথা দেখবেন এমনটি কখনো আশা করেননি।
ভাঁজ খুলতেই সেই চির পরিচিত রংবেরঙের নকশা – যে নকশা তিনি তার দাদাবাড়ি কুষ্টিয়াতে গেলে দেখতেন ।
বিদেশীরাও নকশি কাঁথা ব্যবহার করে? তিনি কিছুটা অবাক হলেন। আরও অবাক হলেন – তাকে দেয়া উপহারের মোড়কটি খুলে যখন দেখলেন, নকশি কাঁথার মলাট বাঁধানো ডাইরি।
সকালে তিনি রুম সার্ভিসকে জিজ্ঞেস করলেন – এগুলো কোথা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা গর্বের সাথে জবাব দিল – এগুলো সব বাংলাদেশে তৈরি দুষ্প্রাপ্য নকশি হাতের কাজ – তারা সরাসরি বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করেছে!
উত্তর দেয়ার ভঙ্গি দেখে জেসমিন মুচকি হাসি দিলেন। মনে মনে ভাবলেন – ওরা যদি জানতো আমি বাংলাদেশ থেকেই এসেছি!
জেসমিনের চোখের সামনে ফেলে আসা শৈশবের কিছু স্মৃতি জীবন্ত হয়ে উঠলো ।
পড়ন্ত দুপুর। বিশাল একটি উঠান। সেখানে কিছু মহিলা জড়ো হয়ে গল্প করছেন আর কাঁথা সেলাই করছেন।
জেসমিন ছুটে ছুটে এক একজনের কাছে যাচ্ছেন আর বলছেন আমাকে বাঘ নকশা দাও, আমাকে একটা পালকি নকশা দাও! ছোট্ট জেসমিনের ছুটাছুটি আর অর্ধ সমাপ্ত ডিজাইন দেখে চমকিত হওয়া দেখে সবাই হাসাহাসি করছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিলাসবহুল হোটেলে দাড়িয়ে ৮০ দশকের গ্রামীণ জীবনকে অনুভব করে অস্পষ্ট চাপা নিঃশ্বাস ছাড়লেন তিনি।
ভাবলেন, এবার দেশে ফিরেই কিছু নকশি কাঁথা এবং ডাইরি সংগ্রহ করবেন। নিজে তো ব্যবহার করবেনই, পরবর্তী কনফারেন্সে গেলে সাথে করে নিয়ে যাবেন বন্ধুদের সারপ্রাইস দেয়ার জন্য!
বাংলাদেশের যে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান এই প্রাচীন লোকশিল্পকে এখনো সযত্নে লালন করছে – “কারুযোগ” তাদের অন্যতম। নকশি কাঁথার হস্তশিল্পের সাথে জড়িত মূল ধারার জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে এই শিল্পকে দেশে এবং দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে গত ১০ বছর জুড়ে নিরলস কাজ করছে কারুযোগ।
নকশি কাঁথা, নকশি চাদর, পাটের সিকা, নকশি নোটবুকসহ চমৎকার সব পণ্য নিয়ে কারুযোগের কাজ ।
দেশীয় শিল্প ও ঐতিহ্যের বিস্তারে সহযোগিতা করতে যুক্ত থাকুন কারুযোগের পেজের সাথে।